সপ্তাহ খানেকের বেশি সময় ধরে সার্ভার জটিলতায় সারা দেশে এবং বিদেশের ৪৫টি মিশনে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের পক্ষ থেকে গত বছর থেকেই এ সার্ভার উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় এ ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে প্রকল্প–সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
৯ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে জন্ম নিবন্ধনের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই সার্ভারে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। প্রকল্প অফিস এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, সার্ভারটি যাতে আবার দ্রুত কাজ শুরু করতে পারে সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে খুব কম সময়ের মধ্যেই চলমান সমস্যার সমাধান হবে।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল—ইউনিসেফের সহায়তায় ২০১০ সালের অক্টোবর মাস থেকে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করা হয়। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে কয়েকটি সার্ভার স্থাপন করে এ কাজের জন্য সফটওয়্যার চালু করা হয়। দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডসহ পাঁচ হাজার তিনটি স্থান এবং বিদেশের ৪৫টি মিশন মূল সার্ভার ব্যবহার করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে মূল সার্ভারের মেমোরি বা ধারণক্ষমতা পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানের জটিলতা দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে সার্ভারের মেমোরি কপি করে অন্য জায়গায় পেস্ট বা অন্য জায়গায় সংরক্ষণের কাজ করা হচ্ছে। এতে করে ২০০ মেগাবাইট জায়গা খালি করা সম্ভব হবে।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগকে সার্ভারের এ ধরনের বিপর্যয়ের বা আশঙ্কার কথা জানানো হয় গত বছর থেকে। সার্ভার উন্নয়নের বিভিন্ন সুপারিশও করা হয়। তবে সেসব সুপারিশ সুপারিশ আকারেই থেকে গেছে।
সার্ভার ও সফটওয়্যারের মানোন্নয়নের জন্য প্রকল্প অফিস থেকে গত বছরের জুন মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, যেকোনো সময়ই সার্ভারটি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। সার্ভারটিতে তিন হাজারের বেশি ব্যবহারকারী একযোগে ব্যবহার করলে সফটওয়্যারটি এই চাপ বহন করতে পারে না। চিঠিতে কম্পিউটার কাউন্সিলের আরও কয়েকটি সার্ভার স্থাপনের জন্য বলা হয়। এ ধরনের কাজে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার সংস্থান চাওয়া হয়। সরকারি রাজস্ব খাত থেকে অথবা জন্ম নিবন্ধন খাতে বিদেশে অবস্থিত মিশনে ফি বাবদ জমা টাকার অংশ থেকে এ অর্থের সংস্থান করার সুপারিশ করা হয়।
এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মিশনের টাকা ব্যবহারসংক্রান্ত একটি সুপারিশ করা হয়।
ইউনিসেফের পক্ষ থেকেও জুন মাসে এক চিঠিতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানানো হয়, ইউনিসেফ এই মুহূর্তে এ ধরনের বড় আর্থিক সহায়তা দিতে পারছে না। তাই মিশনের জমা ফি থেকে সার্ভার ও সফটওয়্যারের মানোন্নয়নের সুপারিশ করা হয়।
জানা গেছে, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন (দূতাবাস) বিধিমালা ২০০৬–এর ১৫ (৩)–এ বলা আছে, ফিস বাবদ আদায় করা অর্থ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন শীর্ষক পৃথক হিসাবে সংরক্ষণ করে সরকারি আর্থিক বিধিবিধান পালন করে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের কাজে ব্যবহার করা যাবে।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আ ক ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর থেকেই সার্ভার বিপর্যয়ের আশঙ্কার কথা জানানো হচ্ছিল। রাজস্ব খাত বা মিশন থেকে ফি বাবাদ জমা কোটি কোটি টাকা থেকেও এ খাতে বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। আমাকে যদি টাকা দেওয়া না হয় আমি কাজটি করব কীভাবে? বর্তমানে ইউনিসেফের সহায়তায় সাময়িকভাবে সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। তবে দ্রুত নতুন ব্যাকআপ সার্ভার স্থাপন ও অন্যান্য উন্নয়ন ঘটানো জরুরি। সার্ভারের ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। কেননা এখন প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার ব্যবহারকারী এ সার্ভারটি ব্যবহার করছেন। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। এ ছাড়া সার্ভারের কোটি কোটি ডেটার মধ্যে একটি ডেটাও যদি নষ্ট হয়, তার দায় দায়িত্ব কে নেবে?’
স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। নতুন করে সার্ভার কিনতে গেলে সময় লাগবে। তাই আপাতত যা আছে তা–ই ঠিকঠাক করা হচ্ছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল সার্বিক সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে। কাল বুধবার মন্ত্রণালয়ে এ–সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বিদেশি মিশনের জমা ফি এ সার্ভার ও সফটওয়্যার উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হবে কি না, জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন ফি সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়ার নিয়ম। তাই এসব ফি সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হবে। তারপর এ কাজের চাহিদা অনুযায়ী তা চাওয়া হবে।
তথ্য সংগ্রীহিতঃ প্রথম আলো 17-02-2015
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস