বিনামূল্যে ভোটার তথ্য সংশোধনে শেষ সুযোগ
অনলাইনে আবেদন আজ থেকে
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস থেকে নাগরিকদের হাতে স্মার্টকার্ড দিতে বিদ্যমান ভোটারদের আজ থেকে অনলাইনে তথ্য সংশোধনের সুযোগ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিনামূল্যে সংশোধনে এটিই হবে ভোটারদের সর্বশেষ সুযোগ। সংশোধনের জন্য এক মাস সময় বেঁধে দিয়ে একটি প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ দুপুরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হবে বলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
ইসিসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২৬ মার্চ থেকে স্মার্টকার্ড সবার হাতে পৌঁছে দেয়ার আগে জাতীয় পরিচয়পত্রের সব ভুলভ্রান্তি সংশোধন করে নিতে চায় ইসি। স্মার্টকার্ড দেয়ার পর ভোটারদের যাতে অর্থ খরচ ও অযথা হয়রানির স্বীকার না হতে হয়, সেজন্য বিশেষ এ সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কারণ স্মার্টকার্ড দেয়া হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের মাধ্যমে সংশোধন ও স্থানান্তরের সুযোগ পাবেন ভোটাররা। সেক্ষেত্রে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে। ভোটারদের এসব হয়রানি যাতে না হয়, এ কারণে ভুলভ্রান্তি থাকলে আগেভাগেই তা বিনামূল্যে সংশোধনের সুযোগ দিচ্ছে কমিশন। এজন্য প্রায় এক মাস সময় দেয়া হচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
এ প্রক্রিয়া শুরু করতে মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ, ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মোঃ সালেহ জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠকে এনআইডি মহাপরিচালক বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রস্তুতের বিষয়টি অবহিত করলে সিইসি বুধবার (আজ) তা উন্মুক্ত করার নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, অনলাইনে তথ্য সংশোধনের সুযোগ দেয়ার বিষয়টি বুধবার (আজ) জানিয়ে দেয়া হবে। তিনি বলেন, 'শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই অনলাইনে ভোটারদের তথ্য সংশোধনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এরপরও যদি কোনো কারণে তথ্য চুরি বা নষ্ট হয়, তাহলে বিকল্প সার্ভার ব্যবহার করবে ইসি।'
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটাররা ছবিসহ ফরমপূরণের সময় যেসব তথ্য প্রদান করেছেন, সেগুলোও দেখতে পারবেন এবং সংশোধনের প্রয়োজন হলে তা সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের সময় সংশোধনের নির্দিষ্ট তারিখ, সময় ও স্থান জানিয়ে দেয়া হবে। সেখানে উপস্থিত হয়ে সহজেই সংশোধন করতে পারবেন ভোটাররা। ফলে সংশোধনের জন্য কাউকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। তারা আরও জানান, অধিকতর নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে স্মার্টকার্ডে আন্তর্জাতিক মানদ- নিশ্চিত করার জন্য আটটি ইন্টারন্যাশনাল সার্টিফিকেশন ও স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করা হয়েছে। স্মার্টকার্ডে তিন স্তরে ২৫টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সনি্নবেশিত থাকছে। এখন যে পরিচয়পত্রটি আছে, তা সহজেই জাল করার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু স্মার্টর্কােড সেটি সম্ভব হবে না। স্মার্টকার্ডের মধ্যে মাইক্রোচিপসে নাগরিকের সব তথ্য দেয়া থাকবে। সরকারি সব অনলাইন সুবিধা, চাকরির জন্য আবেদন, ব্যাংক হিসাব খোলা এবং পাসপোর্ট তৈরি, ই-গভর্ন্যান্স ও ই-পাসপোর্ট সেবাসহ ২৫টি সেবা প্রাথমিকভাবে পাওয়া যাবে। তবে এ সেবার পরিধি আরও বাড়তে পারে।
যেভাবে অনলাইনে সংশোধন করা যাবে : একজন ভোটার ইসির নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে ঢুকে তাকে দেয়া পিন বা ব্যক্তিগত পরিচিতি নম্বর, জন্মতারিখ এবং ওয়েব পাতায় থাকা নিরীক্ষা সঙ্কেত লিখে তার নিজের ভোটারসংক্রান্ত তথ্য যাচাই করে দেখতে পারবেন। আর তথ্যসংক্রান্ত যে কোনো ত্রুটি সংশোধনে তিনি ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই অনুরোধ করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন একটি শুদ্ধ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরির লক্ষ্যে এ ওয়েবসাইটটি বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রকাশ করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটিবিডি ডটকম যৌথভাবে এ সাইটটি দেখভাল করেছে।
পরবর্তীতে সংশোধনে অর্থ গুনতে হবে : প্রথমবার বিনামূল্যে স্মার্টকার্ড দেয়া হলেও ১০ বছর পর পর ১০০ টাকা ফি দিয়ে তা নবায়ন করতে হবে। হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে প্রথমবারের জন্য ২০০, জরুরি ৩০০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩০০, জরুরি ৫০০ টাকা এবং পরবর্তী যে কোনোবারের জন্য সাধারণ ৫০০ এবং জরুরি ১০০০ টাকা পর্যন্ত অর্থদ- দিতে হবে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে ভোটার হওয়ার যোগ্য নন_ এমন নাগরিককেও দেয়া হবে এ পরিচয়পত্র। প্রাথমিকভাবে তৈরি একটি কার্ডের পেছনে ইসির সম্ভাব্য ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২০০ টাকা। আইডিয়া নামের প্রকল্পের (আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাঙ্সে টু সার্ভিসেস) আওতায় ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে সব নাগরিককে পর্যায়ক্রমে স্মার্টকার্ড দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন। প্রসঙ্গত, বিদ্যমান ভোটার তালিকা অনুযায়ী, বর্তমান ভোটারসংখ্যা ৯ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫২।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস